১৭ই জানুয়ারি ২০১৮ মিনার্ভাথিয়েটার-এ গল্ফগ্রিন ঘরে বাইরে অভিনয় করেন অ্যাঞ্জেলিকা ভট্টাচার্যের কাহিনী ব্রেকিং নিউজ্-এর নাট্যরূপ। অ্যাঞ্জেলিকা শহুরে জাঁক-জমকপূর্ণ জীবন থেকে বেরিয়ে এসে মফস্সল ও গ্রাম ভিত্তিক এই কাহিনীটি লিখেছেন,যার মধ্যে আজকের সাম্প্রতিক সমাজচিত্র স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে। ভারতবর্ষের কিছু বিচার বিভাগীয় তদন্তের রায় এবং তার সত্যাসত্যকে ঘিরে এই কাহিনী তৈরি হয়েছে।
নীহার এক অতিব সাধারণ অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল একজন মানুষ, যাকে একটি ধর্ষণ সংক্রান্ত মামলায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে এবং সর্বোচ্চ আদালতও তাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেছে। অথচ পুরোপুরি ভাবে কোনো প্রমাণ সেখানে হাজির করা যাচ্ছেনা যেখান থেকে নীহারের অপরাধটিকে প্রমাণ করা যাবে।
এই রায়কে একদল এন.জি.ও যেমন চ্যালেঞ্জ করেন, অন্যদিকে এক আদর্শবান শিক্ষক সুজন জন-সচেতনতামূলক আন্দোলনের মাধ্যমে এই বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও রায় এবং বিচারের পরিকাঠামো যে কতটা দোষমুক্ত তার প্রচারে নামে। সুজন ঘটনাক্রমে নীহারের একমাত্র কন্যা রিয়া’র শিক্ষক।গ্রামের তরুণ-তরুণীদের মধ্যে সুজন চেষ্টা করে সচেতনতা গড়ে তোলার এবং একটা নির্দিষ্ট আদর্শের পথে তাদের চালনা করার।এর পাশাপাশি ভেসে ওঠে গ্রাম ও শহরাঞ্চলের সমাজ জীবনের অবক্ষয়ের ছবি, রাজনীতি ও দুর্নীতি।প্রবল বাধা বিপত্তি ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে হয় রিয়া ও সুজনকে। বোঝা যায় এই ধর্ষণ সংক্রান্ত মামলাটির পিছনে কোনো একটি অর্থনৈতিক ভাবে সমৃদ্ধ ও ক্ষমতাশীল উপস্থিতি যারা চায় মামলা ঘুরিয়ে দিতে এবং দরকার হলে বিচার ব্যবস্থাকে ও অর্থ বলে দাবিয়ে রাখতে। রিয়া প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে শিকার হয় এক নৃশংস ও কুৎসিত অপরাধের।
নাটক ও কাহিনীর মধ্যে এসে পড়ে আরো অনেক চরিত্র যাদের স্বার্থান্বেষী মানসিকতা ও ক্ষমতার লোভ প্রকট ভাবে ধরা পড়ে। অ্যাঞ্জেলিকা যেমন তাঁর কলমে খুব পেলব ঢঙে তুলে ধরেছেন এইচিত্র, ঠিক তেমনটি নাটকীয় মুহূর্তে ফুটে ওঠে স্টেজ-এ।এটি গ্রাম শহরের ঘটনা হলেও, তা যে কতটা প্রযোজ্য আজকে আমাদের বাস্তব জীবনে তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
শুভোময় রায়
আরও পড়ুন: অরুণ চট্টোপাধ্যায়ের থিয়েটার রিভিউ