ফাল্গুনী ঘোষ: আজ কতকিছুই তো ইতিহাস! এই বাগের সবুজ ঘাস, এত মানুষের পদধূলি, কলরোল, দেওয়ালে গুলির দাগ। নীচে খোদাই করা বুলেটের নাম্বার… সব দর্শনীয়। কোথায় বাচ্চার ভ্যাঁ চ্যাঁ, কেউ জল চাইছে, কেউ বা টুপি, ছাতায় মাথা ঢাকছে, কি চড়া রোদ্দুর। কারো বা আবদার আইসক্রিম। এখানকার কিছু নিশান নিয়ে যেতে হবে তো!!! চল তাড়তাড়ি বেরিয়ে বাজার যাই। কত আনন্দ!
সুস্থ জীবন। নিজের দেশের জল, হাওয়া খেতে যেন কারও চোখ রাঙানি না দেখতে হয়।
তাই এত সমাবেশ, মিটিং, মিছিল। হয়তবা এই জমায়েতও। কিন্তু দুঃশাসনীয় শাসন সেসব মানবে না। সে চায় ক্ষমতার প্রদর্শন। দমিয়ে রাখতে চায় মানুষের সহজ প্রবৃত্তিকে। তবেই না রাজার রাজা। সাধারণ মানুষকে শান্তভাবে কথা বলেও ফেরানো যায়, চাইলে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া যায় কোনো কৌশলে। তাহলে কেন এত রক্ত! গুলির ছররা! এত নৃশংসতা! আজ কোথায় এর উত্তর? চূড়ান্ত সফল শাসক হিসেবে হয়ত সেই শাসনকর্তা নিজে দেশে ফিরে সবোর্চ্চ সম্মান লাভ করেছেন। ছাতি ফুলে উঠেছে মাইকেল ও ডায়ারের! হ্যাঁ এই সেই নাম!
ঠিক ধরেছেন, গুলিবিদ্ধ জালিওয়ানওয়ালাবাগের দেওয়াল গুলোতে আজও কারো কারো হৃদয়ভেদী রুদ্ধশ্বাস শোনা যায়! সেই যন্ত্রণায় প্রতিধ্বনিত আমাদের আজকের আশা, ভালোবাসা, অধিকারবোধের তীব্রতা। আমাদের স্বপ্নের স্বাধীনতা। হে স্বাধীনতা তুমি কি আজ মুচকি হাসছ, এই বিস্মৃতিপ্রবণতায়? হয়ত বলতে চাইছ গুলির দাগগুলো আজও টাটকা। সেই মানুষগুলোর নিঃশ্বাস আজও ঘুরেফিরে দেশের মাটিতে। শুধু উপলব্ধি করার মন চাই। চাই আরো সুস্থ, সুন্দর ভবিষ্যতের আশ্বাস। চাই মানুষ। নাহলে সেই ক্রুর, নিষ্ঠুর মাইকেল ও ডায়ারের সাথে আজ কোথায় আমাদের তফাৎ, যদি নিজের ভাইয়ের পিঠে ছুরি মারি!
নিজের ঘর, নিজের বাংলা ছেড়ে বহুদূর অমৃতসরের ওই বিশেষ বাগে বসে বুঝেছিলাম দেশ কি! মনে পড়েছিল মায়ের কোনো জাত নেই। ভাইয়ের জায়গা বুকেই থাকে।
আরও পড়ুন: মুর্শিদাবাদ ভ্রমণ পায়ে পায়ে ইতিহাসের খোঁজে