শিবেন মজুমদার
দেবশ্রী চক্রবর্তীর “লাল চিনার পাতা” সমকালীন বাংলা সাহিত্যের একটি উল্লেখযোগ্য উপন্যাস । বাস্তব ঘটনার নিরিখে সত্যের আলোকে এই উপন্যাস নির্মিত হয়েছে । উপন্যাসটির পাতায় পাতায় লেখিকা কাশ্মীরি পন্ডিতদের সমসাময়িক জীবনের জ্বলন্ত সমস্যা তুলে ধরেছেন । টান টান উত্তেজনার মধ্যে টান টান লেখা পাঠক গ্রন্থটিকে শেষ পর্যন্ত পড়তে বাধ্য হয় । শব্দের ব্যবহার, বাক্য গঠন, চরিত্রায়ণ, বিনম্রতা, স্বচ্ছ দৃঢ়তার ধ্বনি এমন হাজারো অভিজ্ঞতা আমাদের কানে বারবার প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে আসে, “ লাল চিনার পাতা “ থেকে । লেখিকা একরাশ ক্ষত বুকে ছবি আঁকেন কাশ্মীরি পন্ডিতদের আত্মকথন নিয়ে । সাথে সাথে পাঠকও ক্ষতবিক্ষত হয়ে ওঠেন অন্তর আত্মার বাস্তব অভিমানে । বোধকরি লেখিকা মানসিক দ্বন্দ্ব, টানাপোড়েন, রাজনৈতিক অভিক্ষা ইত্যাদি ভেদ করে এই উপন্যাস লেখার কাজে হাত দিয়েছিলেন । কলমকেই তিনি হাতিয়ার করে নিজস্ব অভিজ্ঞতাবলে তুলে ধরেছেন কাশ্মীরি পন্ডিতদের যন্ত্রনার দগ্ধ ইতিহাস । তবে উপন্যাস বলা কিছুটা শক্ত । কিন্তু কাহিনী জানা অতীব দরকার হয়ে পড়ে । কারন লেখিকা এই উপন্যাসে বাস্তব ঘটনা তুলে ধরে মাইল মাইল পথ অতিক্রম করেছেন । একজন লেখক হিসেবে এটা কোনমতে কম কৃতিত্বের নয় । আমার ধারনা যত দিন যাবে এই গ্রন্থটির ঐতিহাসিক মূল্য ততো বাড়তে থাকবে । “লাল চিনার পাতা” আগামী দুশোবছর পর ইতিহাসবেত্তাদের কাছে আকরগ্রন্থ হিসেবে ধরা দিলে আশ্চর্য হবার কিছু নেই । সত্যের সন্ধানে বাস্তবের আলো ফেলে লেখিকা আতশ কাচের সাহায্যে যাঁচাই করে দেখে নিয়েছেন সমকালীন কাশ্মীরি পন্ডিতদের অবস্থা । তাইতো আজও আমরা প্রাচীন ভারতের ইতিহাস লিখতে গেলে কলহন, সন্ধ্যাকর নন্দী, তুলসিদাস প্রমুখ লেখক, লেখিকাদের সাহায্য নিয়ে থাকি । তেমন-ই হয়তো আগামীতে কাশ্মীরি পন্ডিতদের ইতিহাস লিখতে গেলে দেবশ্রী চক্রবর্তীর ‘লাল চিনার পাতা’ গ্রন্থের সাহায্য নিতে হবে ইতিহাসবেত্তাদের ।
আরও পড়ুন: রবিবারের ছোটগল্প রাজার ফাঁদ লিখেছেন সসীম কুমার বাড়ৈ
Check Also
সড়ক পরিবহন আইন – দুর্ঘটনা হলেও ক্ষতিপূরণ পাবেন না যাত্রী
সড়ক পরিবহন আইন – নতুন সড়ক পরিবহন আইনে যাত্রী ও পথচারীর বীমা ছাড়াই গাড়ি চলতে …