সবার খবর, ওয়েব ডেস্ক: আপনি যদি অ্যাডভেঞ্চার ভালোবাসেন তবে মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন। গায়ের লোম খাড়া হয়ে যাবে। পৃথিবীর উচ্চতম শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করার স্বপ্ন ১৯২১ সাল থেকেই শুরু হয়ে গেছিল। কিন্তু মাউন্ট এভারেস্টে কেউই পৌছতে পারছিল না। আর পারবেই বা কি করে। সেখানে পৌছানো কম কথা নয়! কারণ পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ জয় করার জন্যে জীবন বাজি রাখতে হয়। দুর্গম পথ, প্রতিকূল আবহাওয়া সব কিছু পার করতে পারলেই আপনার স্বপ্ন পুরণ হবে নতুবা সেখানেই আপনার জীবনের শেষ দিনটা পার করবেন।
২৯০২৮ ফুট অর্থাৎ ৮৮৪৮ মিটার উচ্চতায় পৌছতে গেলে অনেক মৃত্যুর দরজা অতিক্রম করা লাগবে। এই মিশন সম্পূর্ণ করতে গিয়ে অনেক মানুষ হতাশায় ফিরে এসেছেন। অনেক পর্বাতরোহীকে নিজের জীবন দিতে হয়েছে। বহু মানুষের দেহ তো বরফের ভেতর আজও ঢেকে আছে, যা পৃথিবীতে আনা সম্ভব হয়নি। কিন্তু মানুষের অজানাকে জানার ইচ্ছে বারবার মাউন্ট এভারেস্টের কাছে নিয়ে গেছে।
মাউন্ট এভারেস্টে চড়ার স্বপ্ন দেখতেন নেপালের শের পা তেন সিং। তিনি যেকোনো মূল্যে এভারেস্ট জয় করবেনই। কিন্তু এই কাজ একার পক্ষে করা সম্ভব নয়। তাই তিনি সাথি হিসেবে স্যুইজারল্যান্ডের রেমন ল্যামবার্ডকে খুঁজে পান। ১৯৫২ সালে তারা দুজনে মিলে এভারেস্টে চড়ার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েন। কিন্তু সফলতা পাননি। দুজনে অনেক দূর পথ পাড়ি দিয়ে ফেলেছিলেন। সর্বোচ্চ শৃঙ্গ থেকে ১০০০ ফুট দুরেই তাদের স্বপ্ন ভেঙে যায়। তারা আর সামনে যেতে পারেননি। ফিরে আসতে হয় অসফলতার গ্লানি নিয়ে।
শের পা তেন সিং হার মানার পাত্র নন। এবার সাত ব্রিটিশ এবং একজন নিউজিল্যান্ডের পর্বতারোহী নিয়ে এক বছর পর এভারেস্টের মুকুট ছোয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। দিনটি ছিল ৯ এপ্রিল ১৯৫৩ সাল। বরফের রাস্তা, যেকোনো সময় বরফের শিলা ভেঙে পড়ার ভয়, অচেনা আবহাওয়া সব কিছুকে অতিক্রম করে আস্তে আস্তে একের পর এক ক্যাম্প করে তারা এগিয়ে যায়। সেদিন তেন সিংয়ের টিম প্রায় কুড়ি হাজার ফুট উপরে উঠে বিপত্তিতে পড়ে। একটি গর্ত পার হতে গিয়ে তেন সিংয়ের সফর সঙ্গী হিলারি লাফ দেন কিন্তু সেখান থেকে বরফ খসে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে তেন সিং রশি তার উদ্দেশ্যে ছুড়ে দেন। হিলারির জীবন সেদিন কোনোক্রমে বেচে যায়। যাই হোক এডমন্ড হিলারি এবং তেন সিংয়ের টিম ধীরে ধীরে এভারেস্টের কাছা কাছি আসতে লাগলো।
কিন্তু তেন সিংয়ের টিমের আগেই কে যেনো এভারেস্ট জয়ের লক্ষে এগিয়ে চলেছে। তার নাম চার্লস ইভান। তারা ছিল ৯ জনের একটি দল। কিন্তু ইতিহাস যে তেন সিংয়ের নামেই লেখা ছিল। চার্লস ইভানের টিম এভারেস্টের সর্বশেষ অংশ পার করতে পারলো না। লক্ষ্যমাত্রা থেকে ৩০০ ফুট দুরত্বেয় তাদের স্বপ্ন থেমে যায়। এই অংশটাতেই নাকি বেশিরভাগ মানুষের প্রাণ গেছে। ইভানের টিম ফিরে আসলো। রাত্রে ক্যাম্পে বিশ্রাম নেওয়ার পর তেন সিং এবং তার দল সামনের দিকে এগোতে থাকলো। সেদিনের তাপমাত্রা মাইনাস ২৭ ডিগ্রী ছিল। পরিস্থিতি খুব কঠিন ছিল কিন্তু এই বীর যোদ্ধারা হার মানেননি। সকাল ৯ টা। তারা এভারেস্টের দক্ষিণ শৃঙ্গে পা রাখলেন।
আস্তে আস্তে অক্সিজেন শেষ হয়ে আসছিল। তাদের কাছে আর অতিরিক্ত অক্সিজেনের ব্যবস্থাও ছিল না। তেন সিং এবং হিলারির পা ভারি হয়ে আসছিল। সমস্ত ধরনের আসা প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছিল। শুধু একটা জিনিসই বেঁচে ছিল তা হলো মনের জোর। তেন সিং হিলারির দিকে তাকিয়ে দেখে যে তার শ্বাস প্রশ্বাসের কষ্ট হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে হিলারির অক্সিজেনের নল পরিস্কার করে দেয় তেন সিং। সমস্ত প্রতিকূলতাকে পিছনে ফেলে, ২৯ মে ১৯৫৩ সাল সকাল ১১টা ৩০ মিনিট হিলারি এবং শের পা পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গে পা রাখেন। খুশিতে তাদের চোখে জল চলে আসে। তাদের নাম ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। তাদের পথ অনুসরণ করে আজ অনেকেই এভারেস্ট জয় করছে।
আরও পড়ুন: যদি পৃথিবীতে এক সঙ্গে পরমাণু বোমা ফাটে তবে কি হবে?
Check Also
ভালো কাজ করলেই মিলবে খাবার, লাগবে না কোন টাকা
ভালো কাজ করলেই মিলবে খাবার, লাগবে না কোন টাকা কথাটা শুনতে অবাক করার মতো হলেও …