সবার খবর,নিউজ ডেস্ক: গাফফার আলি ধর্মপ্রাণ মানুষ। ফজরের নামাজ পড়ে প্রাতঃভ্রমণ করা তার রোজকার অভ্যাস। তারপর সামান্য একটু বেলা বাড়লে চায়ের দোকানে চা খেয়ে প্রতিদিনের কাজে যোগ দেন গাফফার সাহেব। আজও সেই নিয়মের ব্যতিক্রম হয়নি। তার গলাতেও শোনা গেল চরম বিস্ময়, ‘আমরা বসেছিলাম চায়ের দোকানে। এটা-সেটা গল্প হচ্ছিলো নিজেরদের মধ্যে। মুহুর্তে একটি শব্দ। আর বিকট চিৎকার একসঙ্গে অনেক মানুষের। হতচকিত হয়ে গেলাম সকলে। সবাই দৌড়ে গেলাম পরক্ষণেই। ততক্ষণে সব শেষ’। বছর ৬৮-র এই প্রবীন মানুষটির চোখে মুখে বিস্ময় ঝরে পড়লো। চোখের কোণ বেয়ে নেমে আসলো বেদনার অশ্রু।
জলঙ্গীর সাদিখাঁর দিয়াড়ের এক তরুণ হাজার হাজার মানুষের ভেতর হন্তদন্ত হয়ে ঘুরছে। তার থেকে জানা গেল, দাদা অসুস্থ রাতে খুব বুকে ব্যথায় কষ্ট পেয়েছে। সকালে তিনি বহরমপুর হাসপাতালে যাওয়ার জন্যে বাড়ি থেকে বের হন। তার কাছে মোবাইলও নেই। টিভিতে সংবাদ শুনেই এই তরুণটি দাদার খোঁজে এখানে চলে আসেন। তিনি জানেন না, তার দাদা কোন বাসে চিকিৎসার জন্যে বহরমপুর গেছেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আজ সোমবার সকাল সুন্দর ভাবে শুরু হয়নি মুর্শিদাবাদ জেলার মানুষের। সকাল প্রায় ৬টা নাগাদ, মুর্শিদাবাদ জেলার দৌলতাবাদ থানার বালিরঘাটের নলিনী বাগচী সেতুতে একটি ভয়াবহ বাস দুর্ঘটনা হয়। নদিয়ার করিমপুর থেকে একটি যাত্রী বোঝায় বাস ভৈরব নদের উপরের এই সেতুর রেলিংয়ে ধাক্কা মেরে ভৈরবে তলিয়ে যায়। অনেকেই অনুমান করছে বাসটিতে প্রায় ৫৫-৬০ জন যাত্রী ছিল। ভোরের ঐসময় অনেকেই চিকিৎসার জন্যে জেলা সদর বহরমপুরে যায়। আবার অনেকে ট্রেন ধরার জন্যেও বহরমপুরে আসেন। এছাড়া অফিস, আদালত ও নানান কাজকর্ম তো থাকেই। তাই ভোরের দিকে বাসে যাত্রীদের ভিড় থাকে।
যাই হোক উদ্ধার কাজ দেরিতে শুরু হওয়াই আতঙ্কিত সাধারণ মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাঁদের বিক্ষভের রোষে পড়ে পুলিশ ভ্যান ও উদ্ধার কার্যের গাড়ি। উত্তেজিত জনতা গাড়িগুলিতে ভাংচুর ও অগ্নি-সংযোগ করে। পুলিশের দিকে ধেয়ে আসতে থাকে ইট। উত্তেজিত জনতাকে নিয়ন্ত্রনে আনতে বেগ পেতে হয় পুলিশকে। পুলিশ লাঠি চালায় বিক্ষোভকারীদের ওপর। তাতেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে না আসায় কাঁদানে গ্যাস ও শূন্যে গুলি ছুঁড়ে সাধারণ মানুষকে নিয়ন্ত্রনে আনে। এখন সারা বালিরঘাটে শুধু দেখা যাচ্ছে স্থানীয় ও দূর-দুরন্ত থেকে ছুটে আসা আতঙ্কিত ও আশঙ্কিত মানুষের মুখ। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত স্থানীয় মানুষের চেষ্টায় জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় আট জনকে। সরকারি ভাবে উদ্ধার শুরু হতে দেরি হলেও ঘটনাস্থলে ক্রমশই পৌছতে থাকে প্রশাসন ও উদ্ধারকারী দল। এখন সর্বতভাবেই চলছে উদ্ধারকার্য। মাঝে মাঝেই ভৈরব নদের ঘটনাস্থলে ভেসে উঠছে ডুবে যাওয়া বাসে বন্দী যাত্রীদের জুতো, চপ্পল ও বিভিন্ন ব্যবহার্য জিনিস। যদিও বাসটির এখনও নাগাল পায়নি উদ্ধারকারী দল। স্থানীয় মানুষ বলছেন, এখানে জলের গভীরতা প্রচুর। এখন পর্যন্ত তিন জনের মৃত দেহ উদ্ধার হয়েছে। বাসের মধ্যিখানে আটকে থাকা যাত্রীদের বেঁচে থাকার সম্ভবনা খুবই কম বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে। উদ্ধারকার্য চলছে জোর কদমে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি নিহতদের পরিবারকে পাঁচ লক্ষ টাকা, আহতদের ৫০ হাজার টাকা ও গুরুতর আহতদের ১ লক্ষ টাকা সরকারি আর্থিক অনুদান দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। ভয়াবহ এই বাস দুর্ঘটনায় পরিবার পরিজনদের সাহায্যের জন্যে প্রশাসনের তরফ থেকে এখটি হেল্প-লাইন নম্বর চালু করা হয়েছে। নম্বরটি-০৩৪৮২-২৫৭৪০০ ।
আরও দেখুন: মুর্শিদাবাদের বালুর ঘাটে বাস দুর্ঘটনা, বাসটি এখনও পাওয়া যায়নি
Check Also
সড়ক পরিবহন আইন – দুর্ঘটনা হলেও ক্ষতিপূরণ পাবেন না যাত্রী
সড়ক পরিবহন আইন – নতুন সড়ক পরিবহন আইনে যাত্রী ও পথচারীর বীমা ছাড়াই গাড়ি চলতে …