ছোটগল্প
কচ্ছপ রাজার রাজপ্রাসাদ
শা ম্মী তু ল তু ল
Illustration: Preety Deb
বঙ্গোপসাগরের তলদেশে ছিল এক কচ্ছপের বাস। তার ছিল সেখানে বিশাল রাজত্ব। তার রাজ্যে হীরা, মনি, মুক্তো, খাদ্য, বাসস্থান কোনো কিছুর অভাব ছিল না। কচ্ছপ রাজা আর তার প্রজারা মিলেমিশে সেখানে আনন্দে বসবাস করছিল। কিন্তু ক’দিন ধরে কচ্ছপ রাজার এক মহা অসুখ শরীরে বাসা বেঁধেছে। ডাক্তার, কবিরাজ কিছুতে-ই কাজ হোলোনা। ওষুধ-পথ্যও সব বিফলে গেল।
এমন হলে কি আর প্রজাদের মনে শান্তি থাকে? একদিন রাজ্যের সব চেয়ে বয়স্ক মুরব্বী এসে বলল, দেখো এটা যেমন তেমন রোগ নয়। খুব কঠিন রোগ। তবে একটা উপায় আছে।
তখন সব চেয়ে ছোটো কচ্ছপ এসে বলল, কি উপায় বলুন, যা বলবেন আমরা তাই করবো। শুধু আমাদের রাজা ভালো হওয়া চাই।
একটু কঠিন হতে পারে। তবুও চেষ্টা করতে পারো। এ রোগের একমাত্র ওষুধ গরুর বাচ্চার কলিজা। জ্যান্ত গরুর বাচ্চার কলিজা খাওয়াতে পারলেই রাজার অসুখ সারবে।
কিন্তু এতো মুশকিল। গরু তো আর পানিতে বাস করে না। করে ডাঙ্গায়।
কে কোথায় বাস করে এই খোঁজার দায়িত্ব তোমাদের বাপু। আমার বলার ছিল আমি বললাম।
কি আর করা! রাজাকে বাঁচাতে মুরব্বীর কথামতো গরুর বাচ্চার খোঁজে কচ্ছপ ডাঙ্গায় পা রাখল। দুর থেকে একটি গরুর বাচ্চাকে দেখল, সে হাম্বা হাম্বা করে ঘাস চিবোচ্ছে। কচ্ছপ তার কাছে এসে বলল, গরুবাবু তুমি ভালো আছ?
হ্যাঁ আমি ভালো আছি।
তুমি কেমন আছো?
এই তো কোনোরকম।
কোনোরকম কেন?
আর বলনা আমাদের রাজার খুব অসুখ।
তাই বুঝি?
হ্যাঁ। দিন রাত সবার মাথা খায় খায়। কেন এই কিছুক্ষণ বলে সে গরুর দুধ পান করবে। আবার বলে বাঘের দুধ পান করবে। তাদের সাথে সাক্ষাত করবে।
ওমা এতো ভালো খবর।
কিন্তু সবাইকে কি আর এক সাথে পাওয়া যা, সবার-ই তো কাজ-কাম আছে। নাকি? তাই আগে যাকে পাই, তাকে নিয়ে যেতে হবে।
তাহলে তো আমি আগে যেতে পারি? কি বল?
হ্যাঁ হ্যাঁ নিশ্চয়, কেন নয়।
এই সুযোগে তোমাদের দেশটাও একবার দেখে আসতে পারবো। মজা হবে খুব।
কচ্ছপ তো মনে মনে অনেক খুশি। আমি তো তাই চাইছিলাম।
কচ্ছপকে চুপ থাকতে দেখে বাচ্চাটি বলল, কি ভাবছ।
কিছু না। তাহলে তুমি তৈরি হও। কিন্তু তোমার মা?
চিন্তা করোনা। ভাববে ঘাস খেতে কোনো দুরের গ্রামে গিয়েছি।
এই বলে দু’জনে সাগরের তলে রওয়ানা দিলো। গরুর বাচ্চাটি কচ্ছপের পিঠে চড়ে বসলো। কচ্ছপ ধীরে ধীরে চলতে লাগলো। আর গরুর বাচ্চাটি মজা পেতে লাগলো। মনে মনে ভাবতে লাগলো, আহা কচ্ছপের রাজপ্রাসাদ কত না সুন্দর হবে! জীবনে এতো বড় একটা দিন আসবে কল্পনাও করিনি। মা’কে বলিনি ভালোয় হয়েছে, মা কি আর আসতে দিতো এতো দূরে। রাজার সাথে দেখা করে উপকার করে চলে আসবো এক ফাঁকে। মা-ও খুশি আমিও খুশি। কিছুক্ষণ পর কচ্ছপ বলল, এসে গেছি আমরা এবার নামো। প্রাসাদে ডুকতেই গরুর বাচ্চার চোখ ছানাবড়া। প্রাসাদ দেখে মুগ্ধ সে। কি সুন্দর কচ্ছপ রাজার রাজপ্রাসাদ। রাজাকে কুর্নিশ করে বাচ্চাটি বলল, জাঁহাপনা বলুন, আপনি যা চান তা-ই পাবেন।
সত্যি বলছ বাঁচা?
জী জাঁহাপনা।
বাঁচা, তুমি আমাকে তোমার কলিজাটা দিয়ে দাও। যা চাও তাই পাবে। আমার এক কঠিন অসুখ হয়েছে। ডাক্তার বলেছে গরুর বাচ্চার কলিজা খেতে পারলেই আমি সুস্থ হয়ে যাবো।
কি বললেন জাঁহাপনা?
হ্যাঁ বাঁচা।
রাজার কথা শুনে গরুর বাচ্চাটির মুখ শুকিয়ে গেল। হাত- পা কাঁপছিল তার। কচ্ছপের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল, তুই বেটা আমার সাথে এই চালাকি করলি। নিজেকে বোকা দিয়ে বলল, কোনো কিছু না ভেবেই নিজের প্রাণ নিজেই দিতে এলাম। যেভাবে হোক এখান থেকে এখন পালাতে হবে। নয়লে প্রাণ যাবে। গরুর বাচ্চাটি এবার একটা বুদ্ধি বের করলো। সে বলল, জাঁহাপনা অবশ্যই পাবেন। কিন্তু কলিজা খাওয়ার আগে এটা পুকুরের পানি দিয়ে ধুয়ে মুছে পরিস্কার করতে হবে।নইলে খেতে তেতো লাগবে। কারণ এখানে প্রচুর ময়লা থাকে।
ও ও তাহলে তো ভুল হয়ে গেল।
হ্যাঁ, মস্ত বড় ভুল।
কচ্ছপ তার ভুলের জন্য মাথা নিচু করে রইল। রাজা তখন পুকুর ঘাঁটে তাকে নিয়ে যেতে আদেশ দিলেন। গরুর বাচ্চাটি আবার কচ্ছপের পিঠে চড়ে ডাঙ্গায় চলে এলো। তখন সে কচ্ছপকে একটু দাঁড়াও বলে সেই যে গেল আর ফিরে এলোনা। গরুর বাচ্চাটি তখন দৌড়ে দৌড়ে মায়ের কাছে এসে হাজির হলো। মাকে দেখে মনে মনে বলল, মাকে বলে যাইনি বলেই আজ এতো বড় বিপদ এলো। সেই থেকে বাচ্চাটি আর ভুলেও মাকে ছেড়ে কোথাও যায়না। বন্ধুরা তোমরাও কখনো মাকে না বলে কোথাও যেওনা কিন্তু।
আরও পড়ুন: রবিবারের ছোটগল্প অসুখ লিখেছেন দুঃখানন্দ মণ্ডল