Home / রবিবারের আড্ডা / রবিবারের ছোটগল্প শ্রীদেবী ও বংকু লিখেছেন তৃষ্ণা বসাক

রবিবারের ছোটগল্প শ্রীদেবী ও বংকু লিখেছেন তৃষ্ণা বসাক

ছোটগল্প

রবিবারের গল্প

Illustration: Preety Deb

খবরটা যখন এল, তখন বংকু প্যান্টের পিসের ঝুঁকে পড়ে মোটা নীল মার্কার দিয়ে দাগ দিচ্ছিল। দোকানঘর এসময় শুনশান। লোকাল কর্মচারীরা বিকেলের চরা খেতে গেছে। বংকু কোথাও যায় না। কোথাও যাবার নেই তার। বোনের বাড়ি আছে যদিও। ছোট ভাগ্নীটার টানে যায়, কিন্তু বোন তাকে খুব একটা পছন্দ করে না বোঝে বংকু। আর বাজারের দিকে গেলে তো একটু কিছু খেতে ইচ্ছে করে, পয়সা বেরিয়ে যায়। তার সঙ্গে তো বাড়ি থেকে আনা মুড়ি চানাচুর থাকে। আর দোকান থেকে চা দেয়।
দোকান বন্ধ হলে বংকুর কাজও বন্ধ হয়। সে তখন ঘাড় পিঠ টান করে সামনের চড়াই রাস্তাটায় একটু হেঁটে আসে। সামনের পাহাড়ের কোলে বাড়িগুলোর আলো যেন দেওয়ালির রাতের মতো মনে হয়। মনটা ভালো হয়ে যায় বংকুর। তার তখন মনে থাকে না তার জন্যে অপেক্ষা করে আছে একটা ঠান্ডা কনকনে একলা রাত। গিয়ে বরফের মতো জমাট খাবারগুলো নিজেই গরম করে সঙ্গে সঙ্গে খেয়ে নিতে হবে। একমুহূর্ত দেরি করলেই খাবার আবার জমাট বরফ। এই জীবনে তার আনন্দ বলতে মাঝে মধ্যে সকালের বাসি ভাত তরকারি না খেয়ে গরম গরম ঝাল ঝাল পেঁয়াজ রসুনে গরগরে ডিমের ঝোল খাওয়া। আর একটা আনন্দ তার আছে। আছে একজন। একফালি বিছানায় যাকে জড়িয়ে শুয়ে থাকে বংকু। এক হাতের চুড়ির ওপর আর এক হাতের চুড়ি দিয়ে ঝঙ্কার তোলা সেই বিখ্যাত ভঙ্গি।
‘মেরে হাতো মে ন ন চুড়িয়া হ্যাঁয়’ মালবাজারে পম্পা সিনেমায় দেখা মিনতির সঙ্গে। ‘চাঁদনি ও মেরি চাঁদনি’ বুকে তার নাম লিখে রেখেছে সেই থেকে। দেওয়ালে তার পোস্টারের নিচে শুয়ে থাকে টেলারিং শপের নিঃসঙ্গ কারিগর বংকু। শুয়ে শুয়ে টের পায় চাঁদনীর উত্তাপ, আর একা লাগে না তার।
আর সে-ই চাঁদনীই কিনা নেই! শ্রীদেবী নেই! নীল মার্কা ধরে প্যান্টপিস কাটতে কাটতে কাঁচি থেমে যায় বংকুর। ধূপগুড়ি থেকে চলে আসার সময় জামাকাপড় আর টুকিটাকির সঙ্গে ছেলেমেয়েকে লুকিয়ে আনা চাঁদনির পোস্টারটা। রিংঝাংপোর ঠান্ডা স্যাঁতসেঁতে কাঠের বাড়িতে তক্তপোশ ঠেসা দেওয়ালে জ্বলজ্বল করছে এখনও।
বংকুর মনে হল মালকিনকে বলে এখনি ছুটে চলে যায় বাড়ি, গিয়ে দেখে ছবিটা। কিন্তু চাইলেই দোকান ফেলে যেতে পারবে না বংকু। ছেলেগুলো বেরিয়েছে, দোকান ফাঁকা রেখে যেতে পারবে না সে। মালকিনের বর সোসোর দোকান দেখার কথা, কিন্তু সে কোন দারুর ঠেকে পড়ে আছে কে জানে! মালকিন অন্য দিন নজরদারি করতে আসে, আজ কী একটা কাজে পুলিশ বাজার গেছে। মালকিন থাকলে সে বুড়ো আঙ্গুলটা দেখিয়ে বলতে পারত, ‘খুব ইয়ে চেপেছে, একটু ঘর থেকে ঘুরে আসছি’। কিন্তু মালকিন নেই, মালকিনের বর নেই, বাকি ছোঁড়াগুলো চরা খেতে বেরিয়েছে, দশ মিনিট বলে আধঘণ্টা পঁয়তাল্লিশ মিনিট কাটিয়ে আসে। ওরা সব খাসি ছেলে, এখানকার, মালিক ওদের কিছু বলে না, হাল্কা ধমক দেয় হয়তো কখনো সখনো, কিন্তু বংকুকে ছাড়বে না এরকম করলে। বকুনি টকুনি নয়, একেবারে ছাড়িয়েই দেবে। তাহলে তো বংকুকে আবার ফিরে যেতে হবে ধূপগুড়ি, সেখানে ভিজে স্যাঁতসেঁতে অন্ধকার ঘরে একা একা বসে ঘটঘট করে মেশিন চালাতে হবে, কজন আর শার্ট প্যান্ট বানাতে আসে তার কাছে, এখন সব জায়গায় মল না কী বলে তাই হয়ে গেছে, ওখানে কেনাকাটা ছাড়াও দুশ মজা, খাও দাও, সেলফি তোলো, সিনেমা দেখো। সেসব ফেলে লোকে বংকুর কাছে আসবে কেন? যাও বা আসে দু দশ টাকার অল্টারের কাজ, আর মেয়েছেলেরা খালি আসবে চুড়িদারের হাতা লাগাতে কিংবা নাইটির আরেক প্রস্থ সেলাই মারতে। আর সেই টাকা চাইতে গেলে এমন খিস্তি করবে যেন বংকুই টাকা ধারে। এখানে এসে সে সব থেকে বেঁচেছে বংকু। মালকিন মার্গারেট থামের খুব বড় একটা কোম্পানির সঙ্গে বন্দোবস্ত, তারাই পিস কাপড় কিনে পাঠায়, এখানে সেলাই হয়ে সেসব লট কে লট সাপ্লাই হয়। জনা দশেক ছেলে কাজ করে বংকু ছাড়া। দোকান না বলে কারখানাই বলা উচিত। বংকুর হাতে সেলাই করা সেইসব মাল নাকি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে, বড় বড় শপিং মলে থরে থরে সাজানো থাকে তার সেলাই করা প্যান্ট, জামা। বোম্বাইতেও যায় নিশ্চয়। সেটা ভেবেই এতদিন পুলকিত হয়েছে বংকু, মনে মনে ভেবেছে তার স্বপ্নের রানি মলে এসে তার বানানো জিন্সের ওপর একবারটি হাত রেখেছে। পরক্ষণেই ভেবেছে, ধুত ওরা কি আর দেশি জিনিস পরে। ওদের জামা জুতো সেন্ট পাউডার সবই তো ফরেনের। এমনকি ওদের জামা কাপড় সব নাকি বিদেশ থেকে কেচে আসে। বংকু অবাক হয়ে ভাবে, বাব্বা, তাহলে তো এবেলা ওবেলা ডেলি প্যাসেঞ্জারি করার মতো বিলেত যেতে হয়। নিজেরা নিশ্চয় যায় না। ঝি চাকরকে পাঠায়। তা সেই চাকর বা ড্রাইভারের জামা প্যান্ট কিনতেও তো আসতে পারে মলে। আর হাত রাখতে পারে বংকুর হাতে সেলাই করা প্যান্টের ওপর। ভাবতেই রোমাঞ্চ হয়েছে এতদিন। সেই গোছা গোছা চুড়ি পরা হাত যেন তার হাতেই এসে পড়েছে। খোঁচা খোঁচা দাড়িওলা মুখে হাত বুলিয়ে সেই মাখনের মতো হাত নেমে গেছে নিচে, আরও নিচে। আর ওমনি বংকু ঘুম ভেঙে লজ্জায় মরে গেছে, বিছানা ভিজে গেছে যে!
কিন্তু সেই হাতটাই যে নেই! যে হাত তার শরীরে জড়িয়ে রোজ রাতে ঘুমোতে যায় বংকু, সেই হাতটাই তো নেই! তাহলে আর কী জন্যে ঘাড় গুঁজে সেলাই করবে সে? এসব জিনিসে তার স্বপ্নের দেবীর হাত তো ইহজন্মে আর পড়বে না।
সেলাই মেশিনের ওপর মাথা রেখে আচ্ছন্নের মতো পড়ে রইল বংকু। কতক্ষণ কে জানে। হঠাৎ কে যেন এসে ওর কাঁধে টোকা দিল। বংকু তখন দেখছিল লাল শিফন শাড়ি পরে শ্রীদেবী বৃষ্টিতে ভিজছে। মি. ইন্ডিয়া। সেই গায়ে কাঁটা লাগানো গান– ‘কাটে নেহি কাটতে এ রাত’। আজ থেকে রাতগুলো কেমনভাবে কাটবে তার! সেই মুহূর্তে কাঁধে টোকা খেয়ে চমকে উঠল বংকু। নীলকান্ত ওর মুখের ওপর ঝুঁকে পড়ে বলছে ‘শরীর খারাপ নাকি দাদা?’ নীলকান্তই ওকে শ্রীদেবীর মৃত্যুর খবরটা দিয়েছিল। ওর পুরো নাম নীলকান্ত মুড়া সিং। ও খাসি নয়, ওর মাতৃভাষা ককবরক। অন্য ছেলেগুলোর মতো সাহেবি ধরনধারন নয় ছেলেটার। ফাঁক পেলে অন্যরা যেমন লটরপটর করতে ছোটে, এ তেমন না। এ খাড়াই রাস্তার একেবারে মাথায় গিয়ে একটা পাথরের ওপর চুপ করে বসে থাকে। মাঝে মাঝে পকেট থেকে একটা ছোট্ট নোটবই বার করে কীসব লেখে। কে জানে কী লেখে? নীলকান্ত মোটামুটি বাংলাও জানে। এই দোকানে ওর সঙ্গেই যা একটু কথাবার্তা বলা যায়। এখন সেই নীলকান্তকেই খুব আপন মনে হল বংকুর। ও নীলকান্তর হাতটা জড়িয়ে ধরে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল। নীলকান্ত অবাক হয়ে বলল ‘কী হয়েছে? বাড়ি থেকে কোন খারাপ খবর?’ বংকু কাঁদতে কাঁদতে বলল ‘চাঁদনী চাঁদনী!’
[Read More: রবিবারের ছোটগল্প রামদুলালের ঢোল লিখেছেন মিলন বনিক]

মলি বিছানায় বসেছিল কম্বলের তলায়। রাতে একেবারে খাওয়ার সময় খাবার গরম করলেই হবে। গরম করার সঙ্গে সঙ্গেই খেয়ে নিতে হয়। নইলে শক্ত বরফ। সোনাই বিছানাতেই একই কম্বলের নিচে বসে পড়ছিল। এতে একটু গরম লাগে, পড়াটা হয়। মিঠাই গুয়াহাটিতে থেকে পড়ছে, ইঞ্জিনিয়ারিং, নিরাপদর পোস্টিং অনেক দূরে, ডিব্রুগড় ছাড়িয়ে বড়্গাঁও বলে একটা জায়গায়। সে ন-মাসে ছ-মাসে বাড়ি আসে। তাই এখন বাড়িতে মোটে দুজন- সে আর সোনাই। টিভিটা মিউট করা। মলি দেখে সন্ধেবেলা একটু। নইলে ঘুম পেয়ে যায়। এত শীতে এই দুজন প্রাণী জেগে থাকা যায় না। আর সে ঘুমিয়ে পড়লে সোনাইও ঘুমিয়ে পড়বে। ওর আর পড়া হবে না। তাই টিভি চালালেও মিউট করা থাকে, সোনাইয়ের মন যাতে ওদিকে না যায়। মলির পিঠে হেলান দিয়ে পড়ে মেয়েটা, তাতে ঠান্ডাটা কম লাগে। অন্যদিন মলি সিরিয়াল দেখে, আজ তার ওসবে মন নেই। নিউজ চ্যানেল চালিয়ে রেখেছে। সকালে একটা অবিশ্বাস্য খবর ছড়িয়ে পড়েছে আসমুদ্রহিমাচল। শ্রীদেবী নাকি আর নেই! এই কি একটা মরার বয়স হল? এই বিস্ময়, শোক কাটতে না কাটতে দানা বেঁধেছে রহস্য। দুবাইয়ে এক বিয়েবাড়ি গিয়ে হোটেলে বাথটবে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে নায়িকাকে। বাথটবের ওইটুকু জলে কেউ ডুবে মরতে পারে? চ্যানেলে চ্যানেলে সেই নিয়ে জমে উঠেছে জোর বিতর্ক। একটা চ্যানেলে তো একটা মেয়েকে বাথটবে শুইয়ে দেখার চেষ্টা হচ্ছে এইভাবে কেউ মরতে পারে কিনা। মেয়েটার জন্যে মায়া হল মলির। তার চেয়েও বেশি মায়া হল খুশি আর জাহ্নবীর জন্যে। ফিল্ম স্টাররা হয়তো তাদের মতো বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে জড়িয়ে মড়িয়ে থাকে না। তবু হাজার হোক, মা তো। সোনাইকে একটু কাছে টেনে নেয় মলি। ওমনি দরজায় শব্দ হয় ‘খট খট খট’
মলি ফিসফিস করে বলে ‘উঃ আবার জ্বালাতে এসেছে। রোজ রোজ রাতে খেতে আসবে। আমি যেন অন্নপূর্ণার মন্দির খুলে বসেছি। একবেলার খাওয়া বাঁচিয়ে সব ঘরে পাঠাবি। মিনতির জন্যে ভেবে আর বাঁচে না। এদিকে মিনতি যে কজনের সঙ্গে শুয়ে বেড়াচ্ছে তার ঠিক নেই। সব খবর কানে আসে বাবা। শিলঙে থাকলে কি হবে’ বলেই মলির খেয়াল হয় সোনাইয়ের সামনে কথাটা বলা উচিত হয়নি তার। হাজার হোক মামী তো। সেবার যখন ধূপগুড়িতে গিয়েছিল, সোনাইকে বুকে করে আগলে রেখেছিল মিনতি। সোনাই মাছ খায় না বলে অভাবের সংসারেও দুদিন মাংস এনে খাইয়েছিল। ফ্রক আর খেলনাও কিনে দিয়েছিল।
মলি ওঠার আগেই সোনাই লেপ ছেড়ে উঠে গিয়ে দরজা খোলে। বাইরে যথারীতি বংকু। কিন্তু এ কেমন বংকু! এবাড়ি এলে বংকু খুব হাসিখুশি থাকে। সোনাইকে দেখলে নিজের মেয়ে দুটোর কথা মনে পড়ে তার। যখনই আসে খালি হাতে আসে না। সোনাইয়ের জন্যে কিছু না কিছু নিয়ে আসে। চিপস, চকোলেট, নিদেনপক্ষে হজমিগুলির প্যাকেট। আজকের বংকু শুধু যে খালি হাতে এসেছে তাই নয়, সে একটা আপাদমস্তক ভাঙ্গাচোরা মানুষ, মনে হচ্ছে তার ওপর দিয়ে বড় কোন ঝড় বয়ে গেছে।
সোনাই অবাক হয়ে বলল ‘কী হয়েছে বংকুমামা? তোমায় এমন দেখাচ্ছে কেন?’
মলি একটু বিরক্ত হয়ে বলল ‘আরে ভেতরে আয়, ঘর তো বরফ হয়ে যাচ্ছে’ বংকুর চেহারা দেখে তার করুণা না হয়ে রাগ হচ্ছিল। ধূপগুড়ি থেকে মিনতির সামান্য জ্বরজারির খবর এলেও কী আদিখ্যেতা করে বংকু। যদিও তার থেকে বছর দুয়েকের বড়, তবু দাদা বলেনি কখনো। কে না জানে মিনতির ডজন খানেক আশিক আছে, তবু বংকুর রকম দেখো। আর এই যে সোনাই মিঠাইয়ের বাবা, একটা হাঁটুর বয়সী খাসি মেয়েকে নিয়ে পড়ে আছে সেই বড়্গাঁওয়ে, মলি তো দূরের কথা, মেয়েদুটোরও খোঁজ নেয় না, মাসের খরচও ঠিক মতো পাঠায় না, অফিসে মেয়েদের নিয়ে হাজির হয়ে চাকরি খাবার হুমকি দিতে তবে মিঠাইয়ের পড়ার খরচ দিচ্ছে। তাও ভদ্রভাবে নয়, তাগাদার পর তাগাদা দিয়ে দিয়ে আদায় করতে হয়। একেকদিন অসহ্য লাগে মলির। এমনিতেই তো সারা জীবন দুই মেয়েকে নিয়ে এই কনকনে শীতের দেশে একা একা সংসার টেনে এল সে। তবু তখন ভরসা ছিল মানুষটা আছে। আর ওই মাগীর কথা জানার পর থেকে সেই ভরসাটাও উবে গেছে। মিঠাই চলে যাবার পর বাড়িটা খাঁ খাঁ করে। মিঠাইয়ের কত বছর পরে সোনাই। সবে সেভেনে উঠেছে। এখনও কত বছর লাগবে বড় হতে, ভাবতেই বুকটা ধড়াস করে ওঠে। এই মেয়ে নিরাপদর বুকের হাড় ছিল। আর এখন একটা খোঁজও নেয় না। মলি রাতে শুয়ে শুয়ে ভাবে পরের মাসে নিরাপদ টাকা পাঠাবে তো? যদি না পাঠায়? এই বিদেশ বিভুঁইয়ে তার সহায় সম্বল বলতে কিছু নেই যে সে নিরাপদকে শায়েস্তা করতে পারে। তার মধ্যে এসে জুটেছে বংকু। নড়বড়ে একটা লোক, অর্ধেক দিন রাতে এসে বডি ফেলে দেবে, ছুটির দিন চাইবে সারাদিন এখানেই কাটাতে। সোনাই ছোট, বোঝে না কিছু, হাত ধরে টানাটানি করে ‘ও বংকুমামা, খেয়ে যাও না, বিকেলে আমাকে চাট খাওয়াতে নিয়ে যাবে তো?’
সোনাইকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল বংকু। মলির আর সহ্য হল না। সোনাই বড় হচ্ছে তো। সে সোনাইকে এক ঝটকায় বংকুর বুক থেকে সরিয়ে বলে উঠল ‘সে মাগি মরেছে নাকি? মরলে জানলি তুই বেঁচে গেলি। কত লোকের সঙ্গে যে ঢলিয়ে বেড়াত। আর শোন, এবেলা আমরা মায়ে ঝিয়ে মুড়ি খেয়ে শুয়ে পড়ব। খরচ খরচা পাঠায় না শুয়োরের বাচ্চাটা।’
বংকু কেমন থতমত হয়ে চেয়ে রইল বোনের দিকে, তারপর সোনাইয়ের দিকে চায়, সোনাই তার দিকে কেমন চোখে তাকিয়ে আছে, যেন চেনেই না। নিজেকে হঠাৎ সদমার কমল হাসানের মতো মনে হল বংকুর। শ্রীদেবী তাকে চিনতে পারছে না! কী যেন বলছিল মলি? মাগি মরেছে, অনেক পুরুষের সঙ্গে ঢলিয়ে বেড়াত! নিজের বোন না হলে ওকে ঠাস করে এক চড় বসিয়ে দিত বংকু। শ্রীদেবী স্বর্গের দেবী। তাকে নিয়ে এত নোংরা কথা! ও আজ এখানে খেতে আসেনি। এসেছিল ওর বুকের জ্বলুনি জুড়োতে, সোনাইয়ের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বললে ওর প্রাণটা ঠান্ডা হত। ও ক্লান্ত পায়ে বেরিয়ে যেতে যেতে বলল ‘আজ রাতে আমি কিছু খাব না রে মলি। শ্রীদেবী চলে গেল, কোন খাবার আমার গলা দিয়ে নামবে না’
মলি বিড়বিড় করে বলল ‘আমি ভাবছিলাম বউদির কিছু’। সে দেখছিল বংকু কেমন টলতে টলতে চলেছে রাস্তা দিয়ে। ওকে কি আজকের রাতটা থেকে যেতে বলা উচিত ছিল? মলি দরজা খুলে রাখতে পারল না আর। ঠান্ডা ঢুকে আসছে।
বংকু রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে দূরের পাহাড়ের আলোকমালার দিকে তাকাল। ওগুলো সব বাড়ির আলো। কে জানে ওই বাড়িগুলোতেও হয়তো তার মতো কেউ শ্রীদেবীর জন্যে কাঁদছে। শ্রীদেবী কি আকাশের তারা হয়ে গেছে এর মধ্যে? আকাশে খুঁজতে খুঁজতে বংকু দেখতে পাচ্ছিল সুইজারল্যান্ডের মখমল সবুজ মাঠে সাদা পরীর মতো সাজে নাচছে শ্রী। সুইজারল্যান্ড নাকি পৃথিবীর স্বর্গ। সেই স্বর্গ থেকে কি শ্রীদেবী দেখতে পাচ্ছে বংকু কত একা হয়ে গেল? হঠাৎ মাথায় জল পড়ে এক ফোঁটা। হিম পড়ছে? বংকুর কিন্তু মনে হল শ্রীদেবীর চোখের জল ওটা। শুধু তার জন্যেই কাঁদছে শ্রী।
Read More: রবিবারের ছোটগল্প শূন্য থেকে শুরু লিখেছেন অমিতাভ দাস

Check Also

গল্প

রবিবারের ছোটগল্প চাঁদ ছোঁয়ার গল্প লিখেছেন সাগরিকা রায়

ছোটগল্প Illustration: Preety Deb কচু গাছের আড়ালে দাঁড়ালেও চান্দু নিজেকে বেশ লুকোতে পারে।গজু বলে, ভাই …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *