কবিতা
ছবি: অনির্বাণ পাল
নিঃসর্গ
অ মি তা ভ মৈ ত্র
রামধনু যেখানে বিকেলের আগে নিভে যায়
বৃষ্টি দু-বার আসে না সেখানে
ক্ষুধার্ত আর বোকা মেঘের দল যতই চিৎকার করুক
আসেনা
আকাশবাড়িতে
তু ষা র ভ ট্টা চা র্য
তারপর গোলচাঁদ ডুবে যায় আকাশবাড়িতে
চারপাশে মুখোমুখি জেগে থাকে শুধু অন্ধকার ;
অনিঃশেষ ভালবাসার ক্ষতচিহ্ন আর
অনন্ত ক্ষুধার গল্প নিয়ে সবাই ঘুমোতে যায়
অনিকেত রাত্রির অন্ধকারে কৃষ্ণগহ্বরে;
জীবনের শেষপ্রান্তে খাদের কিনারে
দাঁড়িয়ে তবু মায়াবী চাঁদের আলো খোঁজে মানুষ
বেঁচে থাকার অনন্ত বাসনায়।
অমিতাভ দাস-এর দুটি কবিতা
পাখিকে লেখা -১
আজ আমাদের বাড়িতে মৌরলা মাছের টক রান্না হয়েছে। অতি সুস্বাদু। খেতে খেতে তোমার কথা মনে পড়ল। তুমি তো মাছ খেতে ভালোবাসো। বাটামাছের ঝাল তোমার তো প্রিয় ছিল জানতাম। শেষ পাতে কচি আমের চাটনি। আহা, তুমি কতো দূরে… এত সব সুস্বাদু পদ একা একা খেতে কী ভালো লাগে বলো…?
অথচ, তোমার কাছে পৌঁছতে গেলে আমাকে গঙ্গা পেরুতে হয় । চুঁচুড়া চন্দননগর ত্রিবেণী পেরুতে হয়… মন্দির মসজিদ গীর্জা পেরুতে হয়…
তুলে নিতে হয় মাধবীলতা, বেল, জুঁই, সস্তার অজস্র গোলাপ-চলতে চলতে রাত নামে। ভৈরবী খালের পিছনে শেয়ালের ডাক শোনা যায়। তর্করত্ন ঠাকুরের ভিটের পাশে একটা অভুক্ত কুকুর শুয়ে থাকে…আমাকে দেখেও যেন দেখে না, অবহেলার সঙ্গে তাকায়…
তোমার কাছে যেতে গিয়ে কতবার ঠগীর খপ্পরে, ডাকাতের পেল্লাই খাড়া…রামপ্রসাদের তন্ত্রভূমি, বর্ধমানরাজের ১০৮ শিবদেউল পেরিয়ে যখন পৌঁছলাম, দেখলাম উত্তরের জানালা খোলা। ভোর নেমেছে অশোকফুলের মত লাল। তোমার খোলাচুলে খেলে যাচ্ছে বৈশাখের আনন্দ ঋতু। না- ঘুম ক্লান্ত চোখ, হাতে ধরে রেখেছ গতরাতে পড়া শরদিন্দুর তুঙ্গভদ্রার তীরে…
পাখিকে লেখা-২
সাতদিন কথা বন্ধ। তারপর ভয়ংকর একটা ঝগড়া। তারপর ‘এইটাই শেষ এস এম এস ‘। ‘আর কখনো কথা হবে না ।’ এবং সবশেষে ‘ভালো থেকো ‘ লিখেও, কিছু পরে আবার ফোন। আবার সব ঠিকঠাক। ‘ আমি তো রাগ করে বলেছি । তোমায় কী এমন বলতে পারি…’
আবার কবিতার মতো আদর- আবদার। আবার ছোট ছোট আড্ডা। গত সাতদিনের জমে থাকা কথা। এসব চলতে চলতেই দিন শেষ হয়। মাস এবং বছর। আকাশ – বাতাস জুড়ে এইসব আনন্দ আয়োজন। গুপ্তকাশী, মথুরা- বৃন্দাবন। সে যে এসেছিল বিনীত মায়া, প্রপঞ্চময়। সে যে কামনার সিম্ফোনি। উদাসীন বৈরাগ্য- বিলাস। ঝড় হয়। মেঘ উড়ে আসে। রাত্রি জুড়ে অজস্র মল্লার।
আমি তাঁকে পাখি বলি। প্রেম, সমুদ্র অপার…
শুভ্রনীল-এর দু’টি কবিতা
দ্বিধালিপি
ভীষণ শীতে একটি ঘামের দৃশ্য ভাবি
রুমালে হাত রেখে দেখি ভিজলো কিনা
ইদানিং তোমার আনাগোনা যতই বাড়ছে
আমার মধ্যে –
ভাবছি-
তুমি না থাকলেই বুঝি ভালো হত;
তোমাকে অনেকদিন না দেখলে যেমন ভাবি –
তুমি যদি থাকতে…
স্বপ্নের ডালপালা
ঘুমের মধ্যে প্রতিরাতে সেই নদীটার কাছে যাই
নীল ঢেউ আঁকা রূপালী ফিতের মতো নদী…
খুব ঘন হয়ে কাছে আসি
দু-হাত পেতে দাঁড়াই ;
চোখ বুজে বলি-প্রেম দাও,
নৈঃশব্দ দাও…
ভিজে আসে চোখের পাতা, দেখি
আশরীর ঢেউ এঁকে নদী তার
অপূর্ব জ্যোৎস্না ছড়িয়েছে
আমার চোখে আঁধার নামে
ই উ সু ফ আ উ লি য়া
আমি দু-পায়ে দাঁড়িয়ে থাকি ভারসাম্য বজাই রেখে
মাঝে মাঝে হাঁটি-দৌড়াই এই পৃথিবীর মাটির উপর
পায়ের ছাপ অনেক এঁকে দিয়েছি ধূলিকণা হওয়া মাটির বুকে।
আমার চোখে আঁধার নামে দীর্ঘ অন্তহীন রাত্রি নিয়ে
আমার আত্মীয় আড়ালে চলে গেছে
কান্নার রেশ এখনো কাটেনি
এর মাঝেই আমি না ফেরার দেশে চলে যাওয়ার গান শুনছি…
পৃথিবীর পথে পথে বিদায় সুর আরও কারো বুকে বাজে।
যে মাটিতে খেলেছি শুয়েছি মেখেছি যে মাটি
দিয়েছে আহার কৃষকের হাতে তুলে
একদিন আমিও হবো সেই মাটির জনম আহার।
সবকিছু ছেড়ে চলে যাবো
আমাকে প্রতিনিয়ত ডাকছে মাটির সাড়ে তিন হাত ঘর
আমার চোখে আঁধার নেমে আসছে…
বিশ্বজিৎ-এর দু’টি কবিতা
মহাকবিতা
পাওয়া না পাওয়ার মাঝে
একটা গভীর অসুখ…
যত্ন-মায়া-অনুরাগ
আরও বড়ো করে তুলছে
আমি এবং আমি
আমার অন্ধকারে আরেকটা আমি
সারাদিন জট পাকাচ্ছে, হাবুডুবু খাচ্ছে,
প্রবণতা ছড়াচ্ছে, বেড়ে উঠছে
দেদার উৎসবে। তুমি
বোঝ অথবা বুঝতে চাও না।
তবুও, আমি আমাকে নিয়েই ব্যস্ত
আমাকে নিয়েই চিৎকার…
লুটোপুটি খাচ্ছি
গভীর জলে ভাগ হয়ে যাচ্ছে,
সমস্ত আকাঙ্খা…
আরও পড়ুন: রবিবারের ছোটগল্প অসুখ লিখেছেন দুঃখানন্দ মণ্ডল