Home / কবিতা / রবিবারের সান্ধ্য কবিতা আসর-১৮

রবিবারের সান্ধ্য কবিতা আসর-১৮

কবিতা

প্রেমের কবিতা

ছবি: অনির্বাণ পাল

লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল-এর দুটি কবিতা

স্পন্দন

মাটির ভিতর শুয়ে থাকা বিছেটির ঘুম ভাঙলে শীতলতাভুক
পায়ের পাতায় শিরশিরানি শুরু হয়ে যায়। পুরো ছয় কাল
শুয়ে থাকার পর এই স্নায়ু স্পন্দনের প্রয়োজন ছিল। নতুবা
কোনো সিঁড়ি নেই, কাল্পনিক সিঁড়ির ধাপে বসে রতন কাকা
যে বিড়ি টেনে চলেছে তা ছাই হবে না কোনো দিন। চাকা
বসে যাওয়া পথের ধারে যতই হিজল পাতার বাতাস লাগুক
সুন্দরতম পায়ের ছাপের জন্য চুপচাপ বসে থাকার কোনো
মানে হয় না। গতরাতে চোতকাকি গালে যে নিঃশ্বাস ফেলেছিল –
তার দিকে না হয় ঠোঁট পাতি, তার পলাশে মিশিয়ে দেই
কিছু কামড়, আর ফরফরে বাংলা ক্যালেণ্ডারটা আবার
কেঁপে উঠুক পয়লা বৈশাখে-

প্রতীক্ষা

একটানা কুড়িয়েছি বকুল। তারপর দীর্ঘ তামাটে রং পেরিয়ে
একটা পুকুরে চান করতে চায় যে পাখি – তার ঠোঁটে ঘননীল
আকাশপথ। তবুও তলানি প্রায় জলের কাছে ডানা ঝাপটাতে
ভালো লাগে – ভালো লাগে বৃষ্টির প্রতীক্ষা করা সমস্ত রতন কাকাদের
কাছে বসে মেঘের ক্লান্তিতে হাত তালি দিতে। বিপন্ন দৃশ্যপট থেকে
ঝুলতে থাকে থোকা থোকা শিমুলের সারি। হাওয়া চায় নীরব হৃদয় –
তাকিয়ে থাকি পথের দিকে – না চাইলেও আসবে কাটফাটা রোদ,
হাঁসফাঁস করা ইতিহাসের প্রণয় থোকে বিন্দু বিন্দু ঘাম আর
বাঁকে হারিয়ে যাবে ঝরাপাতার ছন্দজ্ঞান –

ধর্মশালা

অ নি মে ষ সিং হ

আমাকে ঘিরে রাখে
পঞ্চভূত!
হাতদুটি হাঁটুর নীচে দোল খায়।
এমনই পেন্ডুলাম আছে ঘড়িতে।
দোল খায়, নাচে।
শরীরের সব ফুল নেচে ওঠে।

ঘড়ির মাঝবরাবর নাভি।

ঘড়ির মতো একটি আমিষ পদ।
চল, খাবি?
কাঁটাগুলো তিনদিকে,
তিনমাত্রা খুব দামি
পূর্ব পুরুষ
পূর্ব নারী এবং আমি

পেন্ডুলাম দুলছে
মনুসংহিতা
চক্রবাক পাখির মতো রাষ্ট্রশক্তি

একটা পেশিবহুল দেয়াল,
চারদিকে প্রশাসন
রং
বর্ণ

আমি বরং নিজেকে টিকটিকির কেউ ভাবি

আনুভূমিক ভাবে দেখি ছয়টি তল-
কাম
ক্রোধ
লোভ
মোহ
মদ ও মাৎসর্য্য

দেয়াল ছাড়া কী করে বাঁচা যায় এখানে!
কানে কবচ-কুণ্ডল নেই,
থাকলেও
তোমার ভন্ডামি, ঠিক ধরে ফেলতাম আমি!

সমস্ত দেয়াল তুলে বলছ, পালা!

জানালা নেই
দরজা নেই
এমন ধর্মশালা!

আত্মীয়

সো ম না থ বে নি য়া

রঙিন শহরটি এই গলির মুখে এসেই সাদা-কালো হয়ে গেছে। যে সমস্ত দৃষ্টিগুলির ডেটা কার্ড ফুরিয়েছে, তাদেরকে জড়ো করে, যতটুকু ক্ষীণ আলো; এই সঙ্কীর্ণ ক্ষেত্রফলে প্রাণ সঞ্চার করতে পারে, তার কাছে পুনর্জন্ম একটি কাজের বিষয়। এদিক-ওদিক থেকে দূরত্ব একত্রিত হয়ে, খৈনির মত্ততায় হাতের তালুতে রূঢ় বাস্তবের ছাপ রাখে। একছটাক জীবনের আশায় আলোড়িত স্বপ্নের আলপথে, নাগরিক চেতনার আপেক্ষিক যোগফল, শুধু শূন্যেুর নামতা লেখে। পড়তে-পড়তে হৃৎপিণ্ডের রক্তাক্ষর খাবি খায়। শিরদাঁড়ায় ঠেলাগাড়ির ক্লান্তি, কাকের বাসার মতোন; গঠন আছে, মনন নেই। তবুও শান্তির কাছে হেঁটে আসে ছায়া। বুকে জড়িয়ে একটি গাছ হয়ে যায় ঋতুর বারোমাস্যে র দীর্ঘ পাটাতনে। একটি অদৃশ্যে সমীকরণ মেনে অজস্র কানাগলির আর্তি রাজপথে গড়িয়ে, সেই গাছের কাছে যায় কারণ একমাত্র ছায়া কারোর অনাত্মীয় নয়…

বয়স

ঈ শা নী ব সা ক

ক্রমশ বৃদ্ধ হচ্ছে চারিপাশ
ক্লান্ত হয়ে টেনে টেনে এগোচ্ছে সময়
শুধুমাত্র চোখ বুজে উড়িয়ে দিতে চাই
তবু ঘড়ির কাঁটার মুক্তি নেই।
সারারাত জুড়ে দেখি আকাশ তাকিয়ে জানালায়
আমাদের হাত বাড়িয়ে দেওয়া ছুঁতে পারেনি :
পাপ বলতে ঠিক যে সংজ্ঞা বলছো
দরজার তালা ঝোলায় আমি তা খুঁজে পাই।
রোদে শুয়ে যে সমস্ত অসুখ তাদের হুমকি
ঘরে যাও ভেবে দেখো এখন সরাতে হয়
যা কিছু মনখারাপ সব লুকিয়ে রাখো
ফিরে আসার এভাবেই বয়স বেড়ে যায়
বয়স যখন বুড়ো হয় তখনও তার ফুরসত থাকেনা।
আরও পড়ুন: রবিবারের ছোটগল্প কচ্ছপ রাজার রাজপ্রাসাদ লিখেছেন শাম্মী তুলতুল

Check Also

গল্প

রবিবারের ছোটগল্প চাঁদ ছোঁয়ার গল্প লিখেছেন সাগরিকা রায়

ছোটগল্প Illustration: Preety Deb কচু গাছের আড়ালে দাঁড়ালেও চান্দু নিজেকে বেশ লুকোতে পারে।গজু বলে, ভাই …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *