শুধু ভারত নয় সারা পৃথিবী জুড়েই হ্যাশট্যাগ মি টু আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে। মনে মাঝে মাঝে প্রশ্ন জাগছে নিশ্চয়? মি টু শব্দটি কেন ব্যবহার হয়? হয়তো বা অনেকেই সে সম্পর্কে জানেন না। সারা পৃথিবীতে মহিলারা সেক্সুয়াল হারাসমেন্ট বা যৌন হেনস্থার বিরুদ্ধে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে হ্যাশট্যাগ মি টু লিখে নিজের সাথে ঘটে যাওয়া যৌন উৎপীড়নের খবর পোস্ট করছেন। হলিউড, বলিউড, ভারতের রাজনৈতিক ময়দান, এমনকি মিডিয়ার রিপোর্টারও হ্যাশট্যাগ মি টু ব্যবহার করেছেন নিজের সাথে ঘটে যাওয়া যৌন হেনস্থার খবর সকলকে জানাতে। এই মি টু যেন মহিলাদের না বলা দুটি কষ্টের শব্দ। এই #মি টু বেআব্রু করেছে সমাজের বিভিন্ন গণ্য-মান্য ব্যক্তিদের। রিপোর্ট বলছে, ৭৫% মহিলারা তাঁদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া যৌন হেনস্থার খবর নতিভুক্ত করে না।
হ্যাশট্যাগ মি টুর উৎপত্তি কবে হয়েছে?
আমেরিকার সামাজিক এক কর্মকর্তা যার নাম তারানা বার্ক, প্রথমবারের মতো হ্যাশট্যাগ মি টু লিখে মহিলাদের ওপর ঘটে যাওয়া শারীরিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে নিজের প্রতিবাদের ভাষাকে আরো শান দিয়েছিলেন। তারানা একজন সামাজিক কর্মকর্তা। তাছাড়াও তিনি একজন উকিল। সেই সময় সারা পৃথিবীর মহিলাদেরকে তারানা আবেদন করেন যে, তাদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া যেকোনো অত্যাচারের কথা মি টু হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে পরিষ্কার ভাবে বলার জন্য।
প্রথমবার মি টু হ্যাশট্যাগ কে ব্যবহার করেন?
তারানা বার্ক প্রথমবারের মতন মি টু হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করেছিলেন। বিশেষ করে পৃথিবীর কৃষ্ণাঙ্গ মহিলাদের ওপর ঘটে যাওয়া অত্যাচার তাকে ভাবিয়ে তুলেছিল এবং তিনি সে কারণে খুব মর্মাহত ছিলেন। মনে মনে পরিকল্পনা করে ফেলেছিলেন ঠিক কি করবেন। যাতে মহিলারা তাদের মনের কথা খুলে বলতে পারে। সে সময় মাই স্পেস নামের একটি সোশ্যাল মিডিয়া পেজ সক্রিয় ছিল। অত্যাচারিত মহিলাদের কণ্ঠস্বর হিসেবে তিনিই প্রথমবার এই পেজে হ্যাশট্যাগ মি টু ব্যবহার করেছিলেন। মি টু ক্যাম্পেইন চলার সময় একটি ১৩ বছরের মহিলার সঙ্গে যৌন নির্যাতনের কথা প্রকাশ্যে আসে। তারানা বলেন, একটি অনুষ্ঠানে মাধ্যমে মহিলাদের সঙ্গে কথা বলছিলাম সেই সময় একটি ১৩ বছরের মহিলার সঙ্গে ঘটে যাওয়া অত্যাচারের ঘটনা আমার সামনে আসে। আমি যখন ওই ১৩ বছরের শোষিত মেয়েটির সঙ্গে কথা বলি। তখন জানতে পারি তার মায়ের বয়ফ্রেন্ড তার ওপর যৌন নির্যাতন চালিয়েছে। এই ঘটনা শোনার পর তারানা বার্কের মনে দুটি শব্দ আসে ‘মি টু’। পরবর্তীতে এই দুটি শব্দই সারা পৃথিবীর মহিলাদের কষ্টের কথা হ্যাশট্যাগ লাগিয়ে শেয়ার করা হচ্ছে।
হ্যাশট্যাগ মি টু কেনো?
হ্যাশট্যাগ মি টু আন্দোলন চালানোর পিছনে একটাই কারণ ছিল। কারণ তারানা নিজেই ৬ বছর বয়সে শারীরিক ভাবে শোষিত হয়েছিলেন। তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া এই ঘটনা তার প্রতিবেশী ঘটিয়েছিল। এখানেই থেমে থাকেনি। পরবর্তীতে সে যখন যুবতী তখন ধর্ষণের মতো ভয়বহতা সামনে আসে। তিনি জানতেন এই কষ্ট কাউকে বলার নয়। ঠিক করেন মি টু ক্যাম্পেইন চালাবেন যাতে মহিলাদেরকে মুখ বুজে এই অত্যাচার সহ্য না করতে হয়। টুইটারে প্রথম বার ব্যবহার হয়েছিল মি টু হ্যাশট্যাগ। পরবর্তীতে তা সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
শুধু ভারতে নয় এই সময়ে ৮৫ টি দেশে মি টু হ্যাশট্যাগের মাধ্যমে পুরুষদের দ্বারা নারীদের বিভিন্ন যৌন নির্যাতনের কথা তুলে ধরছেন।
আরও পড়ুন: ভারতের লেডি সিংঘাম আইপিএস অফিসার: মুখ্যমন্ত্রী থাকা অবস্থায় যাকে গ্রেপ্তার করেন