Home / রবিবারের আড্ডা / ভ্রমন / মুর্শিদাবাদ ভ্রমণ পায়ে পায়ে ইতিহাসের খোঁজে

মুর্শিদাবাদ ভ্রমণ পায়ে পায়ে ইতিহাসের খোঁজে

মুর্শিদাবাদ ভ্রমণ

দেবাশিস মুখোপাধ্যায়

১.
কোনোদিনই পরিকল্পনা করে ভ্ৰমণ করিনি । আগের দিন ঠিক হলো মুর্শিদাবাদ ভ্রমণ করতে যাবো বাসে করে । কিন্তু বাস যাত্রার নিদারুণ অভিজ্ঞতা হলো, কারণ রাস্তায় কাজ হচ্ছে । তাই সাড়ে এগারোয় চেপে বহরমপুর পৌঁছালাম সন্ধ্যা ছটায়।উঠলাম বহরমপুর লজে । অন্যদের বলবো ট্রেন প্রচুর ও সস্তায় আরামের যাত্রা সেটাই করুন। কবি বন্ধু দেবাশিস সাহাকে খবর দিয়েছিলাম । সে বাইক নিয়ে এসেছিল । কিছুক্ষণ কথা এবং ঘোরার বিষয়ে তার পরামর্শ নিয়ে হোটেল থেকে একজনের পরামর্শ মাফিক গাড়ি বুক হলো নিজেদের মতো ঘোরার । অন্যদের খরচ যারা কম করতে চান তাদের বলবো টোটো ভাড়া করে ঘুরতে যেতে।
কাঠগোলাপ ময়দান
পরের দিন মঙ্গলবার । সকালের প্রথম ভ্ৰমণ একার লালদিঘি, বিশাল এই দীঘি সন্ধ্যায় অপরূপ হয়ে ওঠে । শহর বিশাল, সেখানে সাংষ্কৃতিক কর্মকান্ড হচ্ছে রবীন্দ্রসদনে, বিশাল রবীন্দ্রনাথের মূর্তি আছে । সন্ধ্যায় সেখানেই আড্ডায় বসলাম কবি সমীরণ ঘোষের সঙ্গে বেশ খানিকক্ষণ ।
নবাব
নয়টায় গাড়ি এলে আমরা জ্যাম পেরিয়ে প্রথম দেখলাম পুরোনো কাশিমবাজার রাজবাড়ি। দেখলাম গাড়ি থেকেই । এটি বন্ধ থাকে এবং সংরক্ষণের অভাবে ধ্বংসপ্রায়। পাতালেশ্বর শিবমন্দির দেখলাম। সতীদাহ ঘাট। জায়গাটি বেশ মনোরম এবং গাছপালায় ভরা। মনে হয় ঠাঁই নি। কিন্তু পরের যাত্রা অন্য কোথাও। কাশিমবাজার রাজবাড়ীর সামনে দাঁড়ালাম। মার্বেল শোভিত প্রাসাদ ও প্রদর্শণীশালাটি চমৎকার। ত্রিশটাকা দেখা র মূল্য। একজন স্থানীয় মহিলা গাইড, কোনোমতে বিভিন্ন জায়গা দেখালেন এবং বললেন, বাংলা ধারাবাহিকের বা সিনেমার শুটিং এখানে হয়। এখন এটি বিয়ে বাড়ি ও অন্যান্য অনুষ্ঠানে র জন্য ভাড়া দেওয়া হয় ।
[আরও পড়ুন: ভ্রমণ কাহিনী ]
২.

মুর্শিদাবাদ ভ্রমণ করতে করতে এপর্যায়ে কাশিমবাজার রাজবাড়ীর ভিতরে। এখানে অনেক ইতিহাস ঝাড়বাতির আলো পেরিয়ে অন্ধকার টের পাওয়া যায় নাচমহল-এ। কাছারি বাড়ির অদ্ভুত
নিষ্ঠুরতা সামনে আসে। আবার এসব থেকে বেরিয়ে আসার জন্য নাটমন্দির, গোবিন্দ সেবা, দুর্গা পুজো। কাশিমবাজার রাজবাড়ী আর রেল স্টেশনের মাঝে ইংরেজদের এক ভগ্ন প্রায় সমাধিক্ষেত্র আছে। ওয়ারেন হেস্টিংস-এর স্ত্রী ও কন্যার সমাধি ছাড়াও আরো অনেকের সমাধি গাড়ি থেকেই দেখলাম। ডাচ বণিকদের সমাধি সেও দূর থেকেই চোখ দেওয়া গেল।
এরপর আসলাম কুখ্যাত ডাকাত দেবী সিংয়ের নশীপুর রাজবাড়িতে। দক্ষিনা প্রত্যেকের দশ টাকা। বেশ বিশাল মহল, আজ দুর্দশাগ্রস্ত। এখানে এক গাইড কুড়ি টাকা নিয়ে বুঝিয়ে দিলেন। এক অত্যাচারী লম্পট লোকের কাহিনী এবং তার কিছু চিহ্ন এখনো দেয়ালে, মেঝেতে বর্তমান। মন্বতর ও তার পাপী মনে কোনো অনুতাপ আনেনি। হিরাবাই-এর ছবি কতটা সত্য বহন করে জানা নেই। তবে সেই খাজনা আদায়ের খাতাগুলি আজও বুকে আতঙ্ক জাগায়। ইনি আবার দেবী ভবানীর মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে মন্দির নির্মাণ করেন। এখানে একটি সংগ্রহশালা আছে এবং বর্তমান এক শিল্পীর কিছু কাজ চোখে পড়ার মতো। কিছু ছবি তোলা হলো কারণ হাজারদুয়ারী-এর অনুকরণে এটি নির্মাণ করেন দেবী সিংহের ভাইপো বা দত্তক পুত্র বলবন্ত সিং।
জেলা মুর্শিদাবাদ
নশীপুর রাজবাড়ী হতে উত্তর পূর্ব দিকে আমরা গেলাম কাঠগোলা বাগানবাড়িতে। সুন্দর গাছপালা দিয়ে ছাওয়া মনের মতো একটা জায়গা পেলাম। গাছের ফাঁক দিয়ে যেমন হনুমান দেখতে পেলাম তেমন সাদা পাথরের চার অশ্বারোহী মূর্তি বাগান পাহারা দিচ্ছেন। এখানেও টিকিট কেটে ঢুকতে হয় এবং জানার আগ্রহ থাকলে একজন গাইড ভাড়া করা দরকার। সে আবার শেষে ছন্দ মিলিয়ে যদি বলে তবে আনন্দ দ্বিগুন হয়। গোপন জলপথ ও কুয়ো দেখা হলো। মর্মর মূর্তিগুলি কিন্তু অপূর্ব শিল্প শৈলীর পরিচয় দেয়। কিভাবে যে সেগুলি মানুষের হাতে নষ্ট হচ্ছে তাও দেখলাম। কিছু বিদেশি মাছ আর কিছু পাখি নিয়ে ছোট চিড়িয়াখানা এদের আয়ের আরেকটা দিক। রাজবাড়ীর ভিতরে নানা আয়না, মাঝখানে নানা আসন। যেখানে বসে বিচার করা যায় কিংবা আলোচনা। আবার একরকম আয়নায় নিজের শরীর দেখতে পেলেও মুখ দেখতে পাওয়া যায় না। আবার খাবার টেবিলের উপরে একটি গোলকে দেখা যায় সিসি টিভির মতো দূরের মানুষ। বেলজিয়াম কাচের আয়না দর্শকের মুখকে উজ্জ্বল ভাবে পরিবেশন করেছিল। জিয়াগঞ্জ কলেজের প্ৰতিষ্ঠাতা শ্রীপৎ সিং-এর পূর্বপুরুষ লছমিপত সিং এটি তৈরি করেন। এঁরা জৈন। একটি পুকুরে মাছ পালন করেন।মাছ মারা গেলে মাছেদের সমাধি দেন ও মর্মর মূর্তি নির্মাণ করেন। এখানে পরেশনাথের মন্দিরটি খুব সুন্দর। মার্বেলের মূর্তি, হাতির দাঁতে তৈরি থাম এবং নানা গাছ ও ফুলের সমারোহ জায়গাটিকে পবিত্র করে তুলেছে। অনেক পর্যটক এসেছিল সেদিন। ফিরবার পথে হনুমানের দলের সাথে দেখা হলো। বেশ ভিখিরীদের মতো ঘিরে ধরেছে আমদের। ছায়াময় এক পৃথিবীর থেকে বেরিয়ে চা খেয়ে যাত্রা আবার।
আরও পড়ুন: সুন্দর ও শান্তির দেশ । যেখানে নাই কোনো সেনা, নাই কোনো নেভি !

Check Also

গল্প

রবিবারের ছোটগল্প চাঁদ ছোঁয়ার গল্প লিখেছেন সাগরিকা রায়

ছোটগল্প Illustration: Preety Deb কচু গাছের আড়ালে দাঁড়ালেও চান্দু নিজেকে বেশ লুকোতে পারে।গজু বলে, ভাই …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *