সবার খবর, ওয়েব ডেস্ক: সোনাগাছি শুধু ভারত নয় এশিয়ার বৃহত্তম রেড লাইট এরিয়া হিসেবে চিহ্নিত আছে। একটি পরিসংখ্যান অনুসারে এখানে প্রায় ১৩০০০ হাজার যৌনকর্মীর বাস। সোনাগাছি কোলকাতার উত্তরে শোভাবাজার ও চিত্তরঞ্জন এভিনিউ মধ্যে অবস্থিত। এখানে উপস্থিত যৌন কর্মীরা সরকারের লাইসেন্স নিয়েই ব্যবসা করেন।
সোনাগাছির (Sonagachi) ইতিহাস
সোনাগাছি অর্থাৎ ‘Tree Of Gold’. বিখ্যাত ইতিহাসবিদ মিষ্টার পিটি নায়ারের মতে, অনেকদিন আগে এখানে একজন কুখ্যাত ডাকাত বাস করতো। যার নাম ছিল সানাউল্লাহ। তিনি সোনাগাছিতে মায়ের সঙ্গেই বসবাস করতেন। হঠাৎ সানাউল্লাহ ডাকাত মারা যান। পুত্রের শোকে মূহ্যমান হয়ে পড়েন এই মহিলা। একদিন তিনি শুনতে পান ঘর থেকে তার পুত্র চিৎকার করে বলছেন, মা তুমি কেঁদোনা। আমি ‘গাজি’(ইসলাম ধর্ম মতে পরকালে সৎ যোদ্ধাদের যে মর্যাদা দেওয়া হয়) মর্যাদা পেয়েছি। তারপর এই যায়গাটিকে সোনা গাজি নামে ডাকা হতো। পরবর্তীতে সোনা গাজি নামটি পরিবর্তিত করে সোনাগাছি রাখা হয়। তাছাড়াও এখানে কিছু জমিদারের বাস ছিল যেমন দারাকান্ত ঠাকুর। তিনি এবং আরও কিছু স্থানিয় জমিদার মিলে সোনাগাছিতে পতিতালয়ের ব্যবসা শুরু করেন। সেখান থেকেই সম্ভবত এখানে আস্তে আস্তে যৌনকর্মীদের ভিড় বাড়তে থাকে। ব্যবসাও ফুলে ফেঁপে উঠতে থাকে ধীরে ধীরে।
Sonagachi বর্তমান অবস্থা
বর্তমানে সোনাগাছিতে (Sonagachi) সরকার, দেশি ও বিদেশি এনজিওগুলি বিশেষ নজর দিয়েছেন। যাতে এখান থেকে এইড্স বা যৌনরোগ না ছড়াই। তাছাড়া সোনাগাছিকে সবচাইতে বেশি অপরাধ প্রবণ এলাকা হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়েছে।
Sanlaap নামের একটি বেসরকারি সংস্থা। যার প্রতিষ্ঠাতা ইন্দ্রানি সিন্হা। তিনি উত্তর আমেরিকাতেও Sanlaap প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংস্থাটি নারিদের অধিকার ও মানব পাচার রোধে বিভিন্ন কাজ করে থাকেন। ইন্দ্রানি সিনহা ‘Guilty Without Trial’ নামের একটি বই লেখেন। তিনি দেখান কিভাবে ভারতের মধ্যে সবচাইতে বেশি নারী পাচারের ঘটনা ঘটে সোনাগাছিতেই। সেই সব নারীরাই পরবর্তীতে যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করেন এখানে।
Sonagachi –তে HIV
বিজ্ঞানী Smarajit Jana ১৯৯২ সালে তৈরী করেছিলেন Durbar Mahila Samanwaya Committee. যাদের কাজ ছিল এই সব রেড এলার্ট স্থানগুলিতে গিয়ে যৌনকর্মীদের বিভিন্ন ধরনের যৌনরোগ সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলা। ১৩০০০ হাজার দেহ ব্যবসায়ির মধ্যে ৫.১৭% মহিলা HIV পজেটিভ সোনাগাছিতে। যা ভারতের অন্যান্য যৌনপল্লীগুলির কাছাকাছি(৫.১%)। অনেক বিশেষজ্ঞ Sonagachi –তে এইআইভি পজেটিভ কম হওয়ার কারণ হিসেবে Durbar Mahila Samanwaya Committee সম্পূর্ণ অবদান বলে মনে করেন।
কিন্তু আশ্চর্য লাগে এখানকার মহিলা যৌনকর্মীদের বক্তব্য শুনলে। তারা বলছেন, এখানে আসা বেশিরভাগ পুরুষ কনডোম ব্যবহার করতে চাই না। যদি আমরা বলি কনডোম ছাড়া দৈহিক মিলন করবো না তবে তারা অন্য দরজায় গিয়ে নক করবে। ব্যবসা হারানোর ভয় থেকে আমরাও কনডোম ছাড়াই খোদ্দেরকে সন্তুষ্ঠ করে থাকি। আমাদের মনের ভেতর বাসা বাঁধে ভয়। এভাবে অনেকেই আস্তে আস্তে অন্ধ গলির পথ চলা শেষ করে অপরিনত বয়সে।
Sonagachi নিয়ে কম লেখালেখি হয়নি। ২০০৫ সালে ‘Born into Brothels: Calcutta’s Red Light Kids’ বেস্ট ডকুমেন্টারি ফিচার হিসেবে ওস্কার জিতে নেই। তাছাড়াও Prof. Shohini Ghosh এবং Dr. Sabeena Ghadioke রচনা করেন ‘Tales of The Night Fairies’ নামের একটি ডকুমেন্টারি। বিখ্যাত অভিনেতা কমল হাসান তৈরি করেন Mahanadhi নামের একটি সিনেমা। যেখানে সোনাগাছির যৌনকর্মীদের জীবন সম্পর্কে তুলে ধরা হয়েছে।
এভাবেই হয়তো সোনাগাছি সম্পর্কে নানান কাহিনী তুলে ধরা হবে কিন্তু দেহ ব্যবসায়িদের জীবন যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই থেকে যাবে।
Read More: অ্যাডাল্ট ফিল্ম ইন্ডাসট্রির অনেক অজানা কথা