সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট, ফেসবুকের কো-ফাউন্ডার এবং সিইও মার্ক জুকারবার্গ বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ ধনকুবেরের একজন।
শুরুর দিকের কথা
মার্ক জাকারবার্গ তার কলেজ হোস্টেল রুমে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট ফেসবুক তৈরি করেছিলেন। যখনই ফেসবুকে ২৫০ মিলিয়নেরও বেশি ব্যবহারকারী হতে শুরু কোরলো, সাথে সাথে মার্ক জাকারবার্গের ব্যাঙ্ক একাউন্টে ডলারের পরিমাণও বাড়তে লাগলো । জকারবার্গ হয়ে উঠলেন বিলিয়নিয়ার । সেই সাথে, “The Social Network” নামের একটি চলচিত্র ফেসবুকের জীবনী হয়ে উঠেছিলো। এবং আজ ফেসবুক বিশ্বের সবচেয়ে ব্যবহৃত সামাজিক নেটওয়ার্কিং সাইট।
মার্ক জাকারবার্গ 14 ই জানুয়ারী 1984 সালে নিউ ইয়র্কের হোইট প্লেইনসে জন্মগ্রহণ করেন। মার্কের বাবা এডওয়ার্ড জুকারবার্গ, একজন ডেন্টিস্ট এবং মা, কারেন জুকারবার্গ একজন সাইকিয়াট্রিস্ট।
মার্ক প্রাথমিক স্কুলে, প্রোগ্রামে খুব আগ্রহী ছিলেন। মার্কের বয়স যখন প্রায় ১২ বছর , তখন তিনি অ্যাটারি বেসিক ব্যবহার করে একটি মেসেজিং প্রোগ্রাম তৈরি করেছিলেন, মার্ক যার নাম দিয়েছিলেন “জুকনেট”। মার্কের এই জুকনেট বাবার অফিসে ব্যবহার করতেন যাতে রুমে চিত্কার না করে একটি নতুন রোগীর নোটিশ দেওয়া যায় । মার্ক এটি পরিবারের সাথে ভাব বিনিময়ের জন্যেও ব্যাবহার করতেন । পরে বন্ধুদের সাথে বিনোদনের জন্যও জুকনেটকে ব্যাবহার করেন মার্ক ।
মার্কের কম্পিউটারের উপর ক্রমবর্ধমান আগ্রহ দেখে, মার্কের বাবা-মা মার্কের জন্যে একজন ব্যক্তিগত কম্পিউটার শিক্ষক “ডেভিড নিউমা” কে সপ্তাহে একদিন শেখাতে বলেছিলেন।
শুধু তাই নয়, মার্ক তার উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে একটি বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে এমপি 3 মিডিয়া প্লেয়ারও তৈরি করেছেন, এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্যবহারকারীর কার্যকলাপের একটি MP3 তালিকা তৈরি করে, যা ব্যবহারকারীরা শুনতে চায়।
2003 সালে, মার্ক জুকারবার্গ গ্রীষ্মের সন্ধ্যায় FaceMash তৈরির ধারণাটি পেয়েছিলেন । মার্ক হার্ভার্ড এর ডাটাবেস হ্যাক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেলেন যেখানে কলেজ ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের প্রোফাইল ফটো আপলোড করে ।
চট জলদি মার্ক একটি প্রোগ্রাম তৈরি করে যা অটোমেটিক্যালি কলেজ ক্যাম্পাসের দুই মহিলার ছবি দেখায় এবং দুজনের ভিতর কে সুন্দর এটির উপর ভোট করতে বলে ওই ওয়েব সাইটে আসা ইউজারদের ।
এই ওয়েবসাইটটি খুবই জনপ্রিও হয়ে ওঠে অল্প সময়ের মধ্যে হার্ভার্ড ইউনিভার্সটির ভিতর ফলে প্রচুর পরিমানে মানুষ ব্যাবহার শুরু করে । যদিও বেশির ভাগ ছাত্র-ছাত্রীরাই ব্যাবহার করতো FaceMash । এতো অল্প সময়ে এতো ইউজার ধরার ক্ষমতা ছিলোনা হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির ফলে যা হওয়ার তাই হলো ক্র্যাস করে গেলো সার্ভার ।
এই ঘটনার পরে, মার্ক হ্যাকিংয়ের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছিলো কারণ মার্ক ডেটাবেস হ্যাকিং করে ছবিগুলি নিয়েছিলেন এবং মার্ক তৈরি করেছিলেন সেই সাইট যেখানে মেয়েদের ভোট দেওয়া হচ্ছিলো, এটাও ছিল বড়ো অপরাধ।
ফলে মার্ককে কমিটির সামনে হাজির হতে হলো এবং অনেক কথা শুনতে হলো তাকে কিন্তু কেউ তার প্রশংসা করলো না, এতো অল্পো সময়ে এতো বড়ো একটি প্রোগ্রাম তৈরি করার জন্য । মৌখিক ভাবে সতর্ক করেই সেদিন ছেড়ে দেওয়া হলো মার্ককে ।
তার পরই মার্কের সব চাইতে বড়ো প্রডাক্ট ফেসবুকের আবিষ্কার । যা আজ শুধু আমরা নই গোটা পৃথিবী ইউজ করছে । মার্ক খুব অল্প সময়ে অন্যানও প্রজেক্টের মতো এই ফেসবুকও তৈরি করেছিলো ।
Facebook তৈরির গল্প
প্রথমত, মার্কের কাছে সামাজিক নেটওয়ার্কিং সাইট নির্মাণের ধারণা নিয়ে দিব্যা নরেন্দ্র এসেছিলেন। দিব্যা মার্ককে বললেন সোশ্যাল সাইটের কথা। যার নাম হবে হার্ভার্ড কানেকশান ।
নরেন্দ্র এবং টুইন উইঙ্কলভসের সাথে একটি ব্যক্তিগত আলাপের পর মার্ক এই কাজটি গ্রহণ করেন। হার্ভার্ড কানেকশান প্রজেক্টের সময়ই মার্কের একটি দুর্দান্ত আইডিয়া মাথায় চলে আসে । মার্ক দেরি না করে ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে একটি ডোমেইন নাম রেজিস্টার করে নেন যার নাম দেওয়া হয় thefacebook.com । পরে অবশ্য এটি পরিবর্তন করে facebook.com রাখা হয় ।
মার্ক এই কাজটি তার বন্ধু এডুয়ার্ডো সাভেরিনের সাথে মিলে করেছিলেন । প্রথমে ফেসবুক প্রজেক্টে এডুয়ার্ডো ইনভেস্ট করেছিলো ।
যখন ফেসবুকে ৪০০০ হাজার ট্রাফিক আসতে লাগলো তখনই দুজনে মিলে সিদ্ধান্ত নিলেন যে কিছু প্রগ্রামার ভাড়া করা যাক । যারা আরও ভালো ভাবে আমাদের এই ওয়েবসাইটে কাজ করবে । জাকারবার্গ কোম্পানির প্রায় ৬০% এর মালিক, ৩৫% এর এডুয়ার্ডো সাভেরিনের আর বাকি ৫% অন্যানোদের ।
২০০৫ সালে মার্ক তার ওয়েবসাইট ফেসবুককে আমেরিকার কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় গুলিতে ব্যাবহারের উপযুক্ত করে তোলেন । কারণ মার্ক একটা কথায় মানতেন, আমার এই ওয়েবসাইট শুধুমাত্র ছাত্র-ছাত্রীদের জন্যে।
ফেসবুক ছড়িয়ে পড়েছিলো গোটা বিশ্বে ফলে এর ইউজারও বাড়তে বাড়তে ৫০ মিলিয়ান হয়ে গেছিলো । তারপরই ইয়াহুর নজরে চলে আসে ফেসবুক । প্রচুর টাকা অফার করে ফেসবুক কেনার জন্যে প্রায় ৯০০ মিলিয়ান ডলার । টাকার অঙ্কটা ছিলো মার্কের কাছে অনেক বড়ো কিন্তু মার্ক যে ফেসবুকের ভবিষৎ উজ্জল দেখতে পাচ্ছে । তাই সেদিন ইয়াহুকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন । মার্কের ধারনায় ঠিক হলো, যে ইন্টারনেট ব্যাবহার করবে তার ফেসবুকে এ্যাকাউন্ট থাকবেই । ফেসবুক নিয়ে মার্কের ধারণা সম্পূর্ণ মিলে গেলো ।
ফেসবুকের সফলতা কতো দুর পাড়ি দিবে তা ভবিষৎ বলে দেবে । আমরা হয়তো তখন পরবর্তী অধ্যায়টা লিখবো ।
জাকারবার্ক দেরি না করে ১৯ মে ২০১২ সালে বিয়েটাও সেরে ফেললেন । বিয়ে করলেন তার এক সময়ের বান্ধবি প্রিসসিলা চ্যানকে । এখনও তারা দুজনেই সুখে শান্তিতে এক সঙ্গে বসবাস করছেন ।
জীবন কতো পরিবর্তনশীল তা মার্ককে দেখেই বোঝা যায় ।